মদিনা সনদের মূল ভাষ্য
ভূমিকা :
রাসূলুল্লাহ সা:
ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও
সফল রাষ্ট্রনীতিবিদ। তিনি
ছিলেন শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অতুলনীয় ও
অবিসংবাদিত নেতা। হিজরত
করে মদিনা মুনাওয়ারা পদার্পণের পরপরই
তিনি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ
করেন। গোত্রীয় শাসনে
অভ্যস্ত আরব গোত্রগুলোকে এ
রাষ্ট্রের সুসভ্য নাগরিক
হিসেবে গড়ে তোলার
জন্য সর্বপ্রথম তিনি
একটি শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করেন।
বিশ্বের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ইতিহাসে এটা
ছিল সর্বপ্রথম লিখিত
শাসনতন্ত্র যা ‘মদিনা
সনদ’ নামে পরিচিত।
মদিনা সনদের
মূল ভাষ্য
রাসূলুল্লাহ সা:
ইসলামী রাষ্ট্রকে সুসংহত
ও সমুন্নত করার
লক্ষ্যে মূলত এই
সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন। সেখানে
ইহুদিদের সাথে মুসলমানদের সম্পর্ক ছাড়াও
ইসলামী রাষ্ট্রের অন্যান্য নাগরিকের মধ্যে
পারস্পরিক চুক্তি, উভয়
পক্ষের ধর্ম ও
বিপক্ষের সব স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়
স্থান লাভ করেছিল। এই
সনদের মূল ভাষ্য
ছিল নিম্নরূপ :
“দয়াময়, পরম
দয়ালু আল্লাহর নামে।
এটা আল্লাহর নবী
মুহাম্মদ সা: কুরাইশ
ও ইয়াসরিবের মুমিন
ও মুসলমান, তাদের
অনুগত, তাদের সাথে
সম্পৃক্ত ও তাদের
পক্ষে জিহাদে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে
সম্পাদিত একটি চুক্তি। তারা
অন্য লোকজন থেকে
একেবারেই স্বতন্ত্র একটি
উম্মাহ। কুরাইশ গোত্রের মুহাজিরগণ তাদের
পরস্পরের মধ্যে রক্তপণ
প্রদানের পদ্ধতির ওপর
প্রতিষ্ঠিত থাকবে। ঈমানদারদের মধ্যে
প্রচলিত উত্তম ও
ন্যায়নীতির ভিত্তিতে মুক্তিপণের মাধ্যমে তাদের
বন্দীদেরকে মুক্ত করবে।
বনু আওফ আগের
প্রথা অনুযায়ী তাদের
পরস্পরের মধ্যে রক্তপণ
প্রদানের পদ্ধতির ওপর
প্রতিষ্ঠিত থাকবে এবং
মুমিনদের মধ্যে প্রচলিত উত্তম
প্রথা ও ন্যায়নীতির ভিত্তিতে মুক্তিপণের মাধ্যমে প্রতিটি গোত্র
তাদের বন্দীদেরকে মুক্ত
করবে। বনু সাইদা
আগের প্রথা অনুযায়ী তাদের
পরস্পরের মধ্যে রক্তপণ
দেয়ার পদ্ধতির ওপর
প্রতিষ্ঠিত থাকবে এবং
মুমিনদের মধ্যে প্রচলিত উত্তম
প্রথা ও ন্যায়নীতির ভিত্তিতে মুক্তিপণের মাধ্যমে প্রতিটি গোত্র
তাদের বন্দীদেরকে মুক্ত
করবে। বনু হারিস
আগের প্রথা অনুযায়ী তাদের
পরস্পরের মধ্যে রক্তপণ
দেয়ার পদ্ধতির ওপর
প্রতিষ্ঠিত থাকবে এবং
ঈমানদারদের মধ্যে প্রচলিত উত্তম
প্রথা ও ন্যায়নীতির ভিত্তিতে মুক্তিপণের মাধ্যমে প্রতিটি গোত্র
তাদের বন্দীদেরকে মুক্ত
করবে। বনু নাজ্জার আগের
প্রথা অনুযায়ী তাদের
পরস্পরের মধ্যে রক্তপণ
দেয়ার পদ্ধতির ওপর
প্রতিষ্ঠিত থাকবে এবং
বিশ্বাসীদের মধ্যে প্রচলিত উত্তম
প্রথা ও ন্যায়নীতির ভিত্তিতে মুক্তিপণের মাধ্যমে প্রতিটি গোত্র
তাদের বন্দীদেরকে মুক্ত
করবে। বনু আওস
আগের প্রথা অনুযায়ী তাদের
পরস্পরের মধ্যে রক্তপণ
দেয়ার পদ্ধতির ওপর
প্রতিষ্ঠিত থাকবে এবং
ঈমানদারদের মধ্যে প্রচলিত উত্তম
প্রথা ও ন্যায়নীতির ভিত্তিতে মুক্তিপণের মাধ্যমে প্রতিটি গোত্র
তাদের বন্দীদেরকে মুক্ত
করবে। কোনো কোনো
রেওয়ায়েতে এতদসঙ্গে বনু
জুসাম ও বনু
নাবিতের কথাও উল্লিখিত হয়েছে,
যাদের ভূমিকাও অনুরূপ
হবে। বিশ্বাসীরা তাদের
মধ্যকার কোনো মুফরিহকে (ঋণগ্রস্ত) পরিত্যাগ করবে
না, বরং মঙ্গলজনক পদ্ধতিতে তার
মুক্তিপণ ও রক্তপণ
প্রদান করবে।
ইবন হিশাম
বলেছেন, মুফরিহ’র
অর্থ ঋণভারে জর্জরিত ও
অভাবী যার পোষ্য
সংখ্যা বেশি। কোনো
বিশ্বাসীর আশ্রিত ব্যক্তির সাথে
ওই বিশ্বাসীকে বাদ
দিয়ে কোনো বিশ্বাসী মৈত্রী
চুক্তিতে আবদ্ধ হবে
না। নিশ্চয়ই আল্লাহভীরু (মুত্তাকি) ঈমানদারেরা নিজেদের কেউ
বিদ্রোহী হলে অথবা
ঈমানদারদের ভেতর অত্যাচার অথবা
পাপ অথবা শত্রুতা বা
বিশৃঙ্খলার প্রসার ঘটালে
সে তাদের কারো
সন্তান হলেও তাদের
সম্মিলিত হাত তার
বিরুদ্ধে অবশ্যই উত্থিত
হবে। কোনো কাফেরের বিনিময়ে একজন
মুমিন অন্য মুমিনকে হত্যা
এবং মুমিনের বিরুদ্ধে কোনো
কাফেরকে সাহায্য করবে
না। আল্লাহপ্রদত্ত নিরাপত্তা সবার
জন্য সমান। শক্তিশালীর বিরুদ্ধে সর্বাপেক্ষা দুর্বলকেও আশ্রয়
দেয়া হবে।
অন্য মানুষেরা নয়,
মুমিনরাই পরস্পর বন্ধু।
ইহুদিদের মধ্যে যারা
আমাদের অনুসরণ করবে
তাদের প্রতি অত্যাচার না
করে তাদের শত্রুদেরকে সাহায্য দান
না করে বরং
ওই ইহুদিদেরকে সাহায্য করা
হবে এবং তাদের
সাথে উত্তম আচরণ
নিশ্চিত করতে হবে।
মুমিনদের চুক্তি অবিভাজ্য। আল্লাহর রাস্তায় সশস্ত্র যুদ্ধের ক্ষেত্রে একজন
মুমিন অন্য একজন
মুমিন ব্যতীত সমতা
ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত চুক্তি
ছাড়া অন্য কারো
সাথে কোনো চুক্তিতে আবদ্ধ
হবে না। প্রতিটি সেনাদল
যারা আমাদের সঙ্গী
হয়ে যুদ্ধ করবে
(বিচ্ছিন্ন না হয়ে),
পরস্পর একে অন্যকে
অনুসরণ করবে। আল্লাহর রাস্তায় প্রবাহিত রক্তের
প্রতিশোধ গ্রহণে মুমিনরা পরস্পরকে সাহায্য করবে।
মুত্তাকি (আল্লাহভীরু) মুমিনরা সর্বোত্তম ও
সঠিক হেদায়েতের ওপর
প্রতিষ্ঠিত। কেউ কোনো
মুশরিক কুরাইশদের জানমালের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে
না এবং কোনো
মুমিনের বিরুদ্ধে কুরাইশদের পক্ষ
অবলম্বন করবে না।
যদি কোনো ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কোনো
মুমিনকে হত্যা করে
এবং তা প্রমাণিত হয়,
আর যদি নিহত
ব্যক্তির অভিভাবক রক্তপণ
গ্রহণ করতে রাজি
না হয়, তাহলে
প্রতিদানে ওই হত্যাকারীকে হত্যা
করা হবে। এ
প্রসঙ্গে মুমিনরা তার
বিপক্ষ অবলম্বন করবে
এবং এর বিরোধিতা করা
কারো জন্য বৈধ
হবে না। যে
মুমিন এই চুক্তিপত্রে সন্নিবেশিত করে
ও আশ্রয় দেয়
তাহলে তার ওপর
আল্লাহর অভিসম্পাত ও
গজব নিপতিত হবে।
তার কাছ থেকে
কোনো অনুতাপ ও
ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করা
হবে না। কোনো
বিষয়ে তোমাদের মধ্যে
যতই মতবিরোধ পরিলক্ষিত হোক
না কেন, তার
জন্য আল্লাহ ও
মুহাম্মদ সা: হলেন
প্রত্যাবর্তন স্থল। যতক্ষণ
মুমিনরা যুদ্ধে নিয়োজিত থাকবে
ইহুদিরা তাদের সাথে
যুদ্ধের খরচ বহন
করবে। বনু আওফের
ইহুদিরা মুমিনদের সাথে
একই উম্মাহ হিসেবে
গণ্য হবে। ইহুদিদের জন্য
তাদের ধর্ম আর
মুমিনদের জন্য তাদের
ধর্ম। একইভাবে তাদের
সাথে মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ
ব্যক্তিরা ও তারা
নিজেরা একই সম্প্রদায় বলে
বিবেচিত হবে। তবে
যারা অত্যাচার ও
অপরাধ করবে, তারা
নিজেদের ও নিজেদের পরিবারের ক্ষতিসাধন করবে,
তারা একই সম্প্রদায় বলে
গণ্য হবে না।
নিশ্চয়ই বনু নাজ্জারের ইহুদিদের জন্য
বনু আওফের ইহুদিদের অনুরূপ
হবে। নিশ্চয়ই বনু
হারিসের ইহুদিদের জন্য
বনু আওফের ইহুদিদের মতোই
হবে। নিশ্চয়ই বনু
সাইদার ইহুদিদের জন্য
বানু আওফের ইহুদিদের সমতুল্য হবে।
বনু জুসমের ইহুদিদের জন্য
বনু আওফের ইহুদিদের সমতুল্য হবে।
বনু আওসের ইহুদিদের জন্য
বনু আওফের ইহুদিদের সমতুল্য হবে।
বানু ছালাবার ইহুদিদের জন্য
তাই হবে যা
হবে বনু আওফের
ইহুদিদের জন্য। তবে
যারা অত্যাচার ও
অপরাধ করবে এবং
তারা নিজেদের ও
নিজেদের পরিবারের ক্ষতিসাধন করবে,
তাদের কথা ভিন্ন।
নিশ্চয়ই বন ছালাবার শাখা
গোত্র জাফনার ইহুদিরা ছালাবার ইহুদিদের মতো
গণ্য হবে। নিশ্চয়ই বনু
শুতায়বার জন্য তাই
যা হবে বনু
আওফের ইহুদিদের জন্য।
নিশ্চয়ই পাপকর্ম নয়,
পুণ্যই কাম্য। নিশ্চয়ই ছালাবাদের সাথে
মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধরাও ছালাবাদের অনুরূপ। ইহুদিদের বন্ধুরাও অবশ্যই
ইহুদিদের মতো। তারা
কেউই মুহাম্মদ সা:-এর অনুমতি
ছাড়া (কোনো যুদ্ধে)
বের হবে না।
নিশ্চয়ই কোনো আঘাতের
প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য
কারো বাধা দেয়া
হবে না। অবশ্য
যে (অত্যাচারিত না
হয়ে) এই বিষয়ে
বাড়াবাড়ি করবে সে
মূলত নিজের ও
নিজের পরিবারের সাথেই
বাড়াবাড়ি করবে। নিশ্চয়ই এই
চুক্তি ও এখানে
যে তাকওয়ার বিষয়
সন্নিবেশিত হয়েছে সে
সম্পর্কে আল্লাহই সাক্ষী
ও এটা রক্ষণাবেক্ষণকারী। নিশ্চয়ই ইহুদিদের খরচ
তাদের ওপর এবং
মুসলমানদের খরচ মুসলমানদের ওপর
বর্তাবে। এই চুক্তিপত্রে যারা
চুক্তিবদ্ধ হলো তাদের
বিরুদ্ধে যারাই যুদ্ধ
করবে তাদের বিরুদ্ধে তারা
পরস্পর সাহায্য করবে।
নিশ্চয়ই তাদের মধ্যে
পারস্পরিক সদুপদেশ ও
পরামর্শ বলবৎ থাকবে
এবং পাপ নয়,
পুণ্যই বিরাজ করবে।
চুক্তিতে আবদ্ধ কারো
দুষ্কর্মের জন্য অন্যরা
দায়ী হবে না।
সাহায্য হবে অবশ্যই
অত্যাচারিতের জন্য। যতক্ষণ
মুমিনরা যুদ্ধে নিয়োজিত থাকবেন,
ইহুদিরা তাদের সাথে
যুদ্ধের খরচ বহন
করবে। এই চুক্তিপত্রে চুক্তিবদ্ধ সবার
জন্য কারো মধ্যে
যদি কোনো বিবাদ
অথবা মতবিরোধের আশঙ্কা
দেখা দেয় তাহলে
তা নিষ্পত্তির দায়িত্ব মহান
আল্লাহ ও মুহাম্মদ সা:-এর প্রতি
সমর্পণ করা হবে।
নিশ্চয়ই আল্লাহ এই
চুক্তিপত্রে উত্তম কাজ
ও তাকওয়ার যে
বিষয়সমূহ সন্নিবেশিত হয়েছে
তার হেফাজতকারী। কুরাইশ
ও তাদের সাহায্যকারীকে আশ্রয়
দেয়া যাবে না।
ইয়াসরিবের ওপর অতর্কিত আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে এই
চুক্তি সম্পাদনকারী পক্ষসমূহ পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
যদি কেউ ধর্মযুদ্ধে লিপ্ত
না থাকে, সেই
অবস্থায় ইহুদিদেরকে কোনো
মীমাংসার দিকে আহ্বান
জানানো হলে ইহুদিরা সেই
মীমাংসা মেনে নেবে।
অনুরূপভাবে ইহুদিরা মুসলমানদেরকে কোনো
মীমাংসার দিকে আহ্বান
জানালে মুসলমানরাও সেই
মীমাংসা মেনে নেবে।
প্রত্যেক পক্ষই তার
ওপর অর্পিত অংশের
(ব্যয়ভারের) দায়িত্ব গ্রহণ
করবে। আওস গোত্রের ইহুদিরা ও
তাদের মিত্ররা এই
চুক্তির সাথে সম্পৃক্ত পক্ষের
সাথে উত্তম আচরণ
করলে তারাও এই
চুক্তি সম্পাদনকারীদের মতোই
গণ্য হবে। ইবন
হিশাম উত্তম আচরণের
পরিবর্তে অধিকতর সম্মানজনক আচরণের
কথা উল্লেখ করেছেন।
ইবন ইসহাক
বলেছেন, পুণ্যই কাম্য,
পাপ নয়। প্রত্যেক কর্মসম্পাদনকারী স্বীয়
কৃতকর্মের দায়িত্ব নিজেই
বহন করবে। এই
চুক্তিপত্রে যা রয়েছে
আল্লাহই তার সততার
সাক্ষী এবং তিনিই
এর রক্ষণাবেক্ষণকারী। শুধু
অত্যাচারী ও পাপী
ব্যতীত কেউই এই
চুক্তির মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি
করবে না। যে
অত্যাচার করবে ও
পাপে লিপ্ত হবে
সে ছাড়া যে
মদিনা থেকে বের
হবে বা মদিনায় অবস্থান করবে,
উভয়ই নিরাপত্তা লাভ
করবে। আল্লাহ ও
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:
সৎ ও তাকওয়া অবলম্বনকারীদের আশ্রয়দানকারী।”
(ইবন
হিশাম, আস-সীরাতুন নাবাবিয়্যা, ২খ.,
পৃ. ১০৬-১০৮)। এই মূল
ভাষ্যে সামান্য কিছু
পরিবর্তন হলেও (আল-বিদায়া ওয়ান-নিয়াহা, ১খ.
পৃ. ১৭৬-১৭৮)
এই ভাষ্যের সংক্ষিপ্ত সার
উর্দু দাইরাতুল মাআরিফ-ই ইসলামিয়্যাতে (পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় ‘উর্দু
দা’ইরাতুল আ’আরিফ-ই
ইসলামিয়া’, মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সা:
খ, পৃ. ১৭০)
ও মহানবী সা:-এর জীবনীকোষে (সালিহ
ইবন আবদুল্লাহ ইবন
হুমায়দ ও আবদুর
রহমান ইবন মুহাম্মদ ইবন
আবদুর রহমান ইবন
মাল্লুহ, মহানবী সা:-এর জীবনীকোষ, পৃ.
৩৯৮-৪০১) উল্লেখ
হয়েছে।
( সংকলিত)
Alhamdulliah.
ReplyDelete